"হিটলারের মৃত্যুর রহস্য: ৮০ বছর পর উঠে এলো নতুন চাঞ্চল্যকর তথ্য"
জার্মানির বার্লিনে হিটলারের বাংকারটি আর নেই। তার ওপর তৈরি হয়েছে ভবন। তবে সেখানে রয়েছে বাংকারটির নকশা
হিটলারের মৃত্যু: ৮০ বছর পর উঠে এলো অজানা সত্য
৩০ এপ্রিল ১৯৪৫। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষপ্রান্তে জার্মানির রাজধানী বার্লিন তখন মৃত্যুপুরীতে পরিণত। সোভিয়েত রেড আর্মির সৈন্যরা ধাপে ধাপে শহর ঘিরে ফেলছে। চারদিক থেকে ঘনিয়ে আসছে আগুন আর গোলাগুলির শব্দ। চারদিকে ধ্বংসস্তূপ আর বিভীষিকাময় নিস্তব্ধতা। ঠিক সেই সময়, বার্লিনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত চ্যান্সেলর ভবনের পাশে নির্মিত গোপন বাংকারে, নাৎসি জার্মানির স্বৈরশাসক অ্যাডলফ হিটলার নিজের জীবন বিসর্জন দেন।
এ ঘটনা ঐতিহাসিকভাবে বহুবার দলিলভুক্ত হয়েছে। তারপরও তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে তৈরি হয়েছে অসংখ্য ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, বিতর্ক এবং গুজব। অনেকের মতে, হিটলার মৃত্যুবরণ করেননি, বরং যুদ্ধের শেষ মুহূর্তে পালিয়ে যান দক্ষিণ আমেরিকায় কিংবা গোপনে লুকিয়ে থাকেন অ্যান্টার্কটিকার কোনো গোপন ঘাঁটিতে। দশকের পর দশক ধরে এইসব গল্প চলতেই থেকেছে।
একটি বই, যা ভেঙে দিল বহু মিথ
২০২৫ সালে, হিটলারের মৃত্যুর ৮০ বছর পর, উঠে এলো নতুন তথ্য। হামবুর্গ এপেনডর্ফ বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ফরেনসিক মেডিসিন ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, প্রখ্যাত ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ক্লাউস পুশেল তাঁর নতুন বই ‘Der Tod geht über Leichen’ (অনুবাদ: ‘মৃত্যুর পথে লাশ পড়ে থাকে’)–এ হিটলারের মৃত্যুর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ধোঁয়াশা সরিয়ে আনেন বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের আলোকে।
ড. পুশেল জানান, হিটলার সায়ানাইড ক্যাপসুল কামড়ে ভেঙে বিষ পান করেন এবং এরপর মাথায় নিজেই গুলি কর
ে আত্মহত্যা করেন। তাঁর এই আত্মহননের প্রক্রিয়াকে ‘যৌথ আত্মহত্যা পদ্ধতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন তিনি। এটাই ছিল সবচেয়ে যৌক্তিক ও বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ভরযোগ্য ব্যাখ্যা।রাশিয়ার গোপন নথি ও খুলির বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা
১৯৯০ সালে ড. পুশেল সুযোগ পান মস্কোর সামরিক মহাফেজখানায় সংরক্ষিত হিটলারের দেহাবশেষ ও মাথার খুলি পরিদর্শনের। সেই অভিজ্ঞতা ও গবেষণালব্ধ তথ্যই উঠে এসেছে তাঁর বইয়ে। পুশেল দাবি করেন, হিটলারের দাঁতের অবস্থা এবং ময়নাতদন্তের ফলাফলে পরিষ্কারভাবে প্রমাণ মেলে যে মৃতদেহটি হিটলারেরই।
তিনি লেখেন, যুদ্ধের শেষে বার্লিনের জর্জরিত পরিস্থিতি সত্ত্বেও বাংকারে পাওয়া মৃতদেহগুলোর ময়নাতদন্ত ছিল যথাযথ এবং তার নথিপত্রও সংরক্ষিত হয়। তার মতে, মৃত্যুর পর মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশও দিয়েছিলেন হিটলার নিজে, যাতে শত্রুরা তাঁর মরদেহের অপব্যবহার করতে না পারে।
একটি অণ্ডকোষহীনতা ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আঘাত
ড. পুশেলের গবেষণায় আরও একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে—হিটলারের একটি অণ্ডকোষ ছিল না। এ বিষয়ে তিনি দুটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এক, ১৯১৬ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আহত হওয়ার কারণে এটি হারান তিনি। দুই, ১৯২৩ সালে ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর ল্যান্ডসবার্গ কারাগারে থাকাকালীন, কারাগারের এক চিকিৎসক তাঁর এই শারীরিক অবস্থার উল্লেখ করেছিলেন।
এই তথ্য বহুদিন ধরে গুজবের আকারে থাকলেও, পুশেল প্রথমবারের মতো তাকে যুক্তিযুক্ত প্রেক্ষাপটে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন।
মৃত্যুর প্রক্রিয়া ও দাহ
পুশেল ব্যাখ্যা করেছেন, সায়ানাইড ক্যাপসুল ভাঙার পরে হিটলারের হাতে ছিল মাত্র দুই মিনিট সময়। এর মধ্যেই তিনি নিজেকে গুলি করেন—সম্ভবত ৭.৬৫ মিমি ক্যালিবারের ওয়ালথার পিস্তল দিয়ে ডান কান বরাবর। তিনি তাঁর দেহ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেও, পুরো দাহ সম্পন্ন হওয়ার আগেই বার্লিনে পৌঁছে যায় সোভিয়েত রেড আর্মি।
দেহাবশেষের গোপন ইতিহাস
হিটলারের দেহাবশেষ নিয়ে সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির বহু বছরের নাটকীয় গোপনীয়তা ও স্থানান্তরের কথাও এসেছে বইটিতে। ১৯৭০ সালে কেজিবির প্রধান ইউরি আন্দ্রোপভ এবং লিওনিদ ব্রেজনেভের নির্দেশে হিটলারের দেহাবশেষ ম্যাগডেবার্গ শহরে মাটিচাপা দেওয়া হয়। ১৯৯১ সালে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানি এক হওয়ার প্রক্রিয়ায়, সোভিয়েত গোয়েন্দা সদর দপ্তর বন্ধ হওয়ার আগে ওই দেহাবশেষ পুড়িয়ে ফেলা হয় এবং ছাই এলবে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। শুধু হিটলারের খুলিটি সংরক্ষণের জন্য মস্কোতে নিয়ে যাওয়া হয়।
একটি অধ্যায়ের সমাপ্তি
অবশেষে, ক্লাউস পুশেল এবং সাংবাদিক বেটিনা মিটেলাখারের যৌথ এই গবেষণা-ভিত্তিক বইটি বহু যুগ ধরে চলা ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ও মিথকে বাস্তব ও বৈজ্ঞানিক যুক্তির আলোকে নতুন করে বিশ্লেষণ করেছে। ইতিহাসের পাতায় বহুদিন ধরে ধোঁয়াশায় ঘেরা হিটলারের মৃত্যুর রহস্য এবার হয়তো স্পষ্টভাবে উঠে এলো।
https://experimentscalp.com/zfzf74p0t3?key=7f24f7040ea7e97aaa0a9bb92f4e7146
Post a Comment