ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তি এখন আরও কাছে

 ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তি এখন আরও কাছে


                               



পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দেওয়ার ফাঁকে এক আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল ভ্যাটিকান সিটিতে





রোমে ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠক: রাশিয়া-ইউক্রেন শান্তিচুক্তির আশায় নতুন অগ্রগতি

পোপ ফ্রান্সিসের শেষকৃত্যানুষ্ঠানে অংশ নিতে রোম সফররত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি গতকাল শনিবার এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। ভ্যাটিকানের ঐতিহাসিক সেন্ট পিটার্স বাসিলিকার অভ্যন্তরে সম্পূর্ণ একান্ত পরিবেশে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান সংঘাতের অবসানে আলোচনার অচলাবস্থা কাটানোর লক্ষ্যেই এ বৈঠক হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হলো যখন রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির ব্যাপারে আলোচনায় গতি এসেছে। এর আগে, গত শুক্রবার ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরের "অত্যন্ত কাছাকাছি" পৌঁছে গেছে। এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগেই মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ক্রেমলিনও ওই আলোচনাকে 'গঠনমূলক' বলে আখ্যায়িত করেছে, যদিও সেই বৈঠকে ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।





ট্রাম্প তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে উল্লেখ করেন, চুক্তির মূল শর্তগুলোর বেশিরভাগ নিয়েই রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তিনি দুই দেশকে দ্রুত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসে চুক্তি চূড়ান্ত করার আহ্বান জানান। ট্রাম্পের মতে, "এটি আলোচনার জন্য একটি চমৎকার দিন ছিল"—একটি সম্ভাব্য শান্তিচুক্তির বার্তা দিয়ে পুরো বিশ্বকে আশাবাদী করে তোলেন তিনি।

এদিকে গতকাল রোমে ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক ঘিরে ছিল কড়া নিরাপত্তা। বৈঠকটি সম্পূর্ণ একান্তে, কোনো তৃতীয় পক্ষের উপস্থিতি ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়। জেলেনস্কির দপ্তর জানায়, দুই নেতা একে অপরের খুব কাছাকাছি বসে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে সংলাপে অংশ নেন। বৈঠকের পরপরই উভয় পক্ষ থেকেই বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে খুব বেশি কিছু প্রকাশ করা হয়নি, তবে উভয়েই বৈঠকটিকে "গঠনমূলক" ও "ফলপ্রসূ" বলে উল্লেখ করেছেন।

জেলেনস্কি বৈঠক শেষে নিজের টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি পোস্টে লেখেন, "ভালো একটি বৈঠক হয়েছে। একান্তে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা বিশ্বাস করি, আলোচনার এই ধারাবাহিকতা থেকে ইতিবাচক ফলাফল আসবে।" তিনি আরও জানান, আলোচনায় প্রধানত জনগণের জীবন রক্ষা, পূর্ণ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি এবং একটি টেকসই, নির্ভরযোগ্য শান্তি প্রতিষ্ঠার বিষয়গুলো গুরুত্ব পেয়েছে—যে শান্তি ভবিষ্যতে যুদ্ধের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সক্ষম হবে।





হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকেও বৈঠক নিয়ে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে। প্রেসিডেন্টের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চিউং সাংবাদিকদের জানান, "দুই নেতা খুবই গঠনমূলক আলোচনা করেছেন এবং এই আলোচনা সামনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সময়মতো জানানো হবে।"

বিশ্লেষকদের মতে, ওয়াশিংটনের ওভাল অফিসে গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তপ্ত বৈঠকের পর এই রোমের সাক্ষাৎ দুই নেতার সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মোড় আনতে পারে। সেই সময় দুজনের মধ্যে যুদ্ধের কৌশল ও পশ্চিমা সহায়তা নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিল। তবে এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। দুই নেতা শান্তির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছেন এবং যুদ্ধ শেষ করার জন্য আরও বাস্তবভিত্তিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই বৈঠককে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইতিমধ্যে ইউরোপীয় মহাদেশের নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে গুরুতর প্রভাব ফেলেছে। শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি এলে তা শুধু ইউক্রেন ও রাশিয়াকেই নয়, সমগ্র বিশ্বকেই স্বস্তি দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প ও জেলেনস্কির এই বৈঠক শান্তিচুক্তির সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে সহায়ক হতে পারে। তবে সবকিছু এখন নির্ভর করছে আগামী দিনের কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলোর ওপর। আর এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও ইউক্রেনের নেতাদের বিচক্ষণতা ও নমনীয়তাই চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের পথরেখা।


https://experimentscalp.com/zfzf74p0t3?key=7f24f7040ea7e97aaa0a9bb92f4e7146


Post a Comment

Previous Post Next Post