"পাঁচ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনার শিরোপা জয়, ক্লাসিকোতে রিয়ালের লাল কার্ড"

 "পাঁচ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনার শিরোপা জয়, ক্লাসিকোতে রিয়ালের লাল কার্ড"


                                                                 



                         গোলের পর আনন্দে আত্মহারা বার্সার জুলস কুন্দেরয়টার্স


বার্সেলোনা ৩-২ রিয়াল মাদ্রিদ: থ্রিলারের পর বিতর্ক, কুন্দের গোলে শিরোপা জয়

রেফারি-বিতর্কের আগুন আগেই জ্বালানো হয়েছিল, যা দুই দলকে মাঠে নামার আগেই উত্তপ্ত করে তুলেছিল। সেভিয়ার প্লাজা নুয়েভায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বার্সেলোনা সমর্থকরা, এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদের সঙ্গে তাদের একত্রিত হওয়ার গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়ে। মাঠে ঢোকার আগে তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছিল, আর অপেক্ষা ছিল শুধু খেলার উত্তেজনা বাড়ানোর।






প্রথমার্ধের ২৮ মিনিটে পেদ্রির দুর্দান্ত গোলে বার্সেলোনা লিড নিলেও, দ্বিতীয়ার্ধে ৭০ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পে রিয়ালের হয়ে সমতা আনে। এর পর ৭৭ ও ৮৪ মিনিটে দুই দলে দুই গোল আদান-প্রদান হয়—রিয়ালের চুয়ামেনি ২-১ গোলে এগিয়ে দেন, আর ফেরান তোরেসের গোল বার্সাকে সমতায় ফিরিয়ে আনে। নির্ধারিত সময়ে ২-২ থাকলেও, অতিরিক্ত সময়ে নাটকীয়তা যেন শেষ হতে চায়নি।

১১৬ মিনিটে বার্সেলোনা ডিফেন্ডার জুলস কুন্দে ফ্রান্স থেকে আসা এক দুর্দান্ত শটে গোল করে বার্সাকে ৩-২ তে এগিয়ে নিয়ে যায়। লুকা মদ্রিচের ঢিলেঢালা পাসের সুযোগে ২৫ গজ দূর থেকে কুন্দে তাঁর শক্তিশালী শটটি লক্ষ্যে পাঠান।

শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলে জয় নিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে বার্সেলোনা। তবে কুন্দের গোলের পর রিয়ালের বিরুদ্ধে লাল কার্ডের ঘটনা আবারও বিতর্ক সৃষ্টি করে, যা ম্যাচের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দেয়।






আরও পড়ুন

শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দেড়েক আগে (১২৩ মিনিট) এমবাপ্পে ফ্রি কিক না পাওয়ায় বেঞ্চ থেকে রেফারির প্রতি তেড়ে যাচ্ছিলেন রিয়াল ডিফেন্ডার আন্তনিও রুডিগার। সতীর্থরা তাঁকে টেনে ধরে থামান। এরপর রিয়ালের বেঞ্চ থেকে কিছু একটা ছুঁড়ে মারা হয় মাঠের রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়া প্রতি। রুডিগার নাকি অন্য কেউ ছুঁড়ে মেরেছেন, তা পরিষ্কার বোঝা যায়নি। এ সময় রুডিগারকে লাল কার্ড দেখান বেনগোচেয়া। কয়েক মুহূর্ত পর লুকাস ভাসকেজকেও।

মৌসুমের তৃতীয় ক্লাসিকোতেও দর্শকদের পয়সা উসুল কিংবা রাত জাগা স্বার্থক। বিশেষ করে বার্সার সমর্থকদের জন্য। গত অক্টোবরে রিয়ালকে লিগে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে জানুয়ারিতে স্প্যানিশ সুপার কাপেও ৫-২ গোলে জিতেছে বার্সা। অর্থাৎ এ মৌসুমে তিনবার রিয়ালের মুখোমুখি হয়ে ১২ গোল করল বার্সা।

এর মধ্যে শেষ তিনটি গোল শুধু ৩২তম কোপা দেল রে জয়ের স্মারক নয়, রিয়ালের চোখে চোখ রেখে ঘুড়ে দাঁড়ানো কাকে বলে, সেটা দেখিয়ে দেওয়াও। শেষ বাঁশি বাজার পর রিয়ালের খেলোয়াড়েরা রানার্সআপ পদক নেওয়ার সময় দুই পাশে দাঁড়িয়ে গার্ড অব অনারও দেন বার্সার খেলোয়াড়েরা।

হারের হতাশায় রিয়ালের খেলোয়াড়েরা
হারের হতাশায় রিয়ালের খেলোয়াড়েরা
রয়টার্স




প্রথমার্ধ দেখে মনে হয়েছে, আগের দুটি ক্লাসিকোর মতো একপেশে হারের স্কোরকার্ড দেখা যেতে পারে। এই অর্ধে রীতিমতো পর্যুদস্ত হয়েছে রিয়াল। পরের অর্ধে সেটাই আবার কড়ায়-গন্ডায় ফিরিয়ে দিচ্ছিল। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর আগে বদলি নামা এমবাপ্পের ফ্রি কিক থেকে গোল সেই চাপেরই প্রতিফলন। সাত মিনিট পরই কর্নার থেকে হেডে চুয়ামেনির গোলে আনন্দে ভেসে যায় লা কার্তোহা স্টেডিয়ামের সাদা গ্যালারি।

তখন ২-১ গোলে এগিয়ে রিয়াল। আর সর্বোচ্চ মিনিট ১৫, তারপরই ধরা দেবে পরম স্বস্তির এক জয়!

ভুল। ৮৪ মিনিটে আবারও মোচড়। এটির জন্ম ফেরান তোরেসের পায়ে। লামিনে ইয়ামালের দারুণ এক পাস থেকে ডান প্রান্ত দিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত ফিনিশিংয়ে তোরেস গোল করার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে ওঠে বার্সা সমর্থকদের গ্যালারি। বার্সার বেঞ্চ থেকে খেলোয়াড়দেরও কেউ কেউ মাঠে ঢুকে কিংবা কেউ টাচলাইনে আনন্দে উদ্বেলিত। তখন জুড বেলিংহাম, আরদা গুলেরদের মুখে তাকানো যাচ্ছিল না।




কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, মৌসুমের পর মৌসুম প্রতিপক্ষকে দেখানো বেলিংহামদের নিজেদেরই ওষুধ কি না হজম করতে হচ্ছে, সেটাও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বিদের কাছে! আরও কষ্টের ব্যাপার, দ্বিতীয়ার্ধে তা কড়ায়-গন্ডায় শোধ করতে করতে ম্যাচে ফিরে তারপর এগিয়েও গিয়েছিল রিয়াল। তোরেসের গোলটি যদি রিয়াল সমর্থকদের বুকে পেড়েকের আঘাত হয়, তবে বিরতির পর যোগ করা সময়ের ৬ মিনিটে সেই আঘাতের কষ্ট তাদের ভুলে যাওয়ার কথা!

দারুণ এক গোলের পর পেদ্রির উদ্‌যাপন
দারুণ এক গোলের পর পেদ্রির উদ্‌যাপন
রয়টার্স

বক্সের বাঁ দিক থেকে বিপজ্জনকভাবে ঢুকে পড়া রাফিনিয়াকে বাধা দেন রিয়াল ডিফেন্ডার রাউল আসেনসিও, পড়ে যান বার্সার এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার, পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়া। এই রেফারির সংবাদ সম্মেলনে বলা কথাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতেই চটেছিল রিয়াল। বেনগোচেয়া তখন স্বাভাবিকভাবেই গ্যালারির সাদা অংশের চক্ষুশূল। সেটা আরও বেড়েছে সম্ভবত ভিএআর পেনাল্টিটি বাতিল করায়। উল্টো পেনাল্টি আদায় করতে ইচ্ছা করে পড়ে গিয়ে হলুদ কার্ড দেখেন রাফিনিয়া।





ম্যাচের সেরা গোলটি প্রথমার্ধের ২৮ মিনিটে, পেদ্রির। অর্কেস্ট্রার কন্ডাক্টরের মতো খেলার সুরটা গেঁথে তারপর নিজে শেষ করেছেন। ভিনিসিয়ুস বল হারানোর পর মাঝমাঠ থেকে ডান প্রান্তে লম্বা পাস দেন ইয়ামালকে। বার্সা তারকা বল পায়ে এদিক-সেদিক করে একটু সময় নিয়েছেন পেদ্রির এগিয়ে আসার। বক্সের জটলা থেকে মাঝের ফাঁকা দৌড়ে আসা পেদ্রির সামনে পাস বাড়ান। ডান পায়ের চোখধাঁধানো শটে গোল!



https://experimentscalp.com/zfzf74p0t3?key=7f24f7040ea7e97aaa0a9bb92f4e7146

Post a Comment

Previous Post Next Post